হর্টেক্স ফাউন্ডেশন শুরু থেকেই সবজি ও ফল রপ্তানিকে প্রাধান্য দিয়ে বেশকিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এসব উদ্যোগ এবং অর্জনের সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ -
১৯৯৬ সালে হর্টেক্স ফাউন্ডেশন এর সহায়তায় চান্দিনা এবং কালিগঞ্জ এলাকার বেশ কিছু কৃষক এবং ব্র্যাক এর সাথে চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করানো হয়। হর্টেক্স ফাউন্ডেশন আইডিএ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্র্যাককে সহযোগিতা করে ব্র্যাককে ১০,০০০ মেট্রিক টন সবজি ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করতে ভূমিকা রাখে। সবজির ভ্যালু চেইন উন্নয়নে উৎপাদন উপকরণ সরবরাহ সহ অংশিজনদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। সে সাথে হর্টেক্স ফাউন্ডেশন কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিক্রয় কেন্দ্র (গ্রামীণ প্যাক হাউজ) স্থাপন করে সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের সংগ্রহোত্তর অপচয় হ্রাস করার সাথে সাথে সবজি ও ফলের গুণগতমান ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সবজি রপ্তানি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ৫ লক্ষ কার্টুন/প্যাকেট বিনামূল্যে এবং স্বল্পমূল্যে কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের নিকট সরবরাহ করে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা করে আসছে। শাক-সবজি, ফলমূল প্যাক হাউজ থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হর্টেক্স ফাউন্ডেশন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহন সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
সবজি রপ্তানি উন্নয়নে হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ১৯৯৬ সাল হতে সরাসরি কৃষিপণ্য রপ্তানি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের সাথে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। জ্ঞান ও দক্ষতা উনয়নের জন্য এ পর্যন্ত ৩১১৬৫ জন কৃষককে রপ্তানির জন্য ফসল উৎপাদন, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পের নির্দিষ্ট বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)-এর ২০৫ জন কৃষি ক্যাডার অফিসারকে টিওটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি ক্যাডার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫৪০ জন কর্মকর্তাকে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ডিএই এর ৬৩০ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ ৩৭২০ জন প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন সদস্য এবং ১২০০ জন বিভিন্ন শ্রেণীর কৃষিপণ্য ব্যবসায়িকে তাদের দক্ষতা উনয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৪১ জন কর্মকর্তা, রপ্তানিকারক ও কৃষককে বিভিন্ন দেশে কৃষি বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়ার জন্য সফর করানো হয়েছে। সাইট্রাস ক্যাংকার রোগের জন্য ২০০৮ সালে বাংলাদেশ হতে ইউরোপে লেবু রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যৌথভাবে কাজ করে ২০১১ সালে পুনরায় লেবু রপ্তানি শুরু হয়। এজন্য হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ১০ কেজি ঝঙচচ চীন থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট-এর নিকট হস্তান্তর করে। ২০১৪ - ২০১৫ অর্থবছরে উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করে এফএও, ডিএই এবং হর্টেক্স ফাউন্ডেশন এর যৌথ সহায়তায় দীপ ইন্টারন্যাশনাল নামের রপ্তানিকারক প্রথমবারের মত WALMART ASDA সুপার শপ ইউকেতে আম রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। মারুহিশা প্যাসিফিক কোম্পানী লিঃ এর অনুরোধে হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ডিএই শেরপুরের সহযোগিতায় জাপানি মিষ্টি আলু annobeni এর মাঠ পরীক্ষা সম্পন্ন করে। মিষ্টি আলুর জাতটি এখন আবাদ এবং রপ্তানি হচ্ছে।
কৃষিপণ্য রপ্তানি উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট ১৩০টি কর্মশালা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম সফলভাবে আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ফসলের ভ্যালু চেইন, বাজার সমীক্ষা বিষয়ে ৪১টি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই NATP-2 প্রকল্পের মাধ্যমে ২২টি জেলার ৩০টি উপজেলায় ৩০টি কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র (সিসিএমসি) এবং ৩০টি কালেকশন পয়েন্ট স্থাপন করে ডিএই এর সহায়তায় সিআইজি কৃষকদের নিয়ে ফসলের ভ্যালু চেইন উন্নয়ন এবং সম্মিলিতভাবে বাজার সংযোগ উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব মডেল গ্রামীণ প্যাক হাউজ (সিসিএমসি) হতে ৩০,০০০ টন নিরাপদ ও গুণগত মানসম্পন্ন সবজি ও ফল দেশের অভ্যন্তরে বিপণন করা হয়েছে ও ২৫০০ টন বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। হর্টেক্স ফাউন্ডেশন কৃষিপণ্যের উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবসা ইনকিউবেশন সেন্টার হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানটিকে ফসলের ভ্যালু চেইন ও রপ্তানি উন্নয়নের “সেন্টার অব একসিলেন্স” প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।